Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

কৃষি তথ্য সার্ভিস

আমাদের দেশে প্রায় দেড়কোটি বসতবাড়ি আছে যার বেশিরভাগই গ্রাম অঞ্চলে। অবস্থানের দিক থেকে বসতবাড়িগুলোর ভিন্নতা খুব সহজেই চোখে পড়ে এরমধ্যে কোনোটি উঁচু ভূমিতে, আবার কোনোটি নিচু ভূমিতে, কোনোটি গাছের ছায়ায় ঢেকে আছে আবার কোনোটিতে দিনভর প্রচুর সূর্যের আলো খেলা করে। আর এই বৈচিত্র্যময় বসতবাড়িগুলোতে যে জিনিসগুলো সচরাচর দেখা যায় তাহলো- ১. ঘরের চালা, ২. ফল ও কাঠের বৃক্ষ, ৩. বড় গাছ ও সবজির মাচার নিচের জমি, ৪. উঠান, ৫. বেড়া ও ৬. পতিত জমি।

বসতবাড়ির এসব জায়গা নিবিড়ভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আমাদের পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কিছু বাড়তি আয়ের পথও সৃষ্টি করতে পারি। আসুন জেনে নেই কিভাবে আমরা আমাদের বসতবাড়ির জায়গাগুলোকে পরিকল্পনামাফিক সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারি।

১। ঘরের চালা : বসতবাড়িতে ঘরের পাশে উন্নত মাদা তৈরি করে লতাজাতীয় সবজির বীজ/ চারা রোপণ করে চাষাবাদ করতে হবে, তারজন্য মাচা হিসেবে ঘরের চাল, গরুর ঘরের চাল, রান্না ঘরের চাল ব্যবহার করা যায়। লতাজাতীয় সবজি গাছ চালের ওপরে তুলে দেয়ার আগে অবশ্যই চালের উপর পাটখড়ি, খড়, গমের ডাঁটা ইত্যাদি বিছিয়ে দিতে হবে। এতে চালের কোনো ক্ষতি হবে না। লক্ষ রাখতে হবে, যেসব লতাজাতীয় সবজির গাছের ওজন কম, সেসব গাছের জন্য ঘরের চাল ব্যবহার করাই উত্তম, যেমন- চালকুমড়া, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, পুঁইশাক ইত্যাদি।

২। ফল ও কাঠের বৃক্ষ : লতাজাতীয় সবজির বা অর্থকরি লতানো ফসল- এর জন্য বাড়ির বড় যে কোনো বৃক্ষ বাউনি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তবে এর জন্য গাছ থেকে ৩ ফুট দূরে ২ ফুট চওড়া ও ২ ফুট গভীর করে গর্ত করতে হবে। এ গর্তে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক কম্পোস্ট সার দিয়ে ভরাট করে মাদায় ১০-১৫ দিন পর বীজ/চারা রোপণ করতে হবে। মাদার আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য মাদার ওপরে মালচিং হিসেবে খড়কুটা ব্যবহার করা যেতে পারে। সাধারণত লতাজাতীয় সবজি হিসেবে লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, ঝিঙা, ধুন্দুল, গাছআলু, চিচিঙ্গা ও অন্যান্য ফসল হিসেবে পান ও চইয়ের আবাদ করা যায়। 
৩। বড় গাছের ও সবজির মাচার নিচের জমি : যেসব ফসলের জন্য কম আলোর প্রয়োজন হয়, সেসব ফসল গাছের ও মাচার নিচের জমিতে চাষাবাদের জন্য ব্যবহার করা যায়। কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে ঝুরঝুরে সমান করে বেডে ছায়া সহনশীল মসলা ফসল হিসেবে আদা, হলুদ ও বিভিন্ন জাতের কচু এবং ওলের চাষ করা যায়।

৪। উঠান : ফসল মাড়াইয়ের জন্য যে পরিমাণ জায়গার প্রয়োজন হয়, সে পরিমাণ জায়গা রেখে, বাড়ির সৌন্দর্যের জন্য ফুলের বাগান, পেঁপে গাছ ও লতাজাতীয় শাকসবজির মাচা ব্যবহার করে চাষ করা যায় এমন সব সবজি হলো পুঁইশাক, লাউ, শসা, শিম, চিচিঙ্গা ঝিঙা ইত্যাদি।

৫। বেড়া : বসতবাড়ির চারপাশে এবং শাকসবজির বাগানে যে বেড়া দেয়া হয় তাতে পাতলা লতাজাতীয় সবজির বাউনি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। যেমন- করলা, শিম, কাঁকরোল, বরবটি, ধুন্দুল, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, শসা ইত্যাদি।

৬। পতিত জমি : জমির আকার ও আয়তনের তারতম্য অনুযায়ী কালিকাপুর মডেল অনুযায়ী সারাবছর শাকসবজি উৎপাদন করা যায়।

এ ছাড়াও বসতবাড়ির পতিত জায়গায় প্রতি দিনের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য উন্নত জাতের মুরগি পালন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। বসতবাড়িতে মুরগি পালন খুবই লাভজনক কাজ।

প্রাপ্ত বয়স্ক একজন মানুষের দৈনিক প্রায় ২১৩ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। কিন' আমরা মাথাপিছু গড়ে প্রায় ৫৩ গ্রাম শাকসবজি খেয়ে থাকি। আমাদের শাকসবজির চাহিদা পূরণ করতে হলে সর্বপ্রথমে বসতবাড়ির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের আজকের এ ছোট উদ্যোগ আগামীতে শুধু পুষ্টি চাহিদা পূরণই নয়, বরঞ্চ বাড়তি আয়ের পথেরও সন্ধান দেবে। তাই আসুন আর দেরি না করে আমরা আমাদের বসতবাড়ির নিবিড় ব্যবহার নিশ্চিত করি।